একটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের পূর্বে অনেকগুলো বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন । তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ফ্ল্যাট ভ্যালুয়েশন বা ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণ। এই মূল্য নির্ধারণ কে বাজার মূল্য বা মার্কেট প্রাইস বলা হয়।প্রথমেই জেনে  নেওয়া প্রয়োজন মূল্য নির্ধারণ বা ভ্যালুয়েশন কি ? এটা হচ্ছে কোন পণ্যের বা সেবার বিক্রয় কালীন সময়ের পেক্ষাপটে আনুষঙ্গিক বিষয় বিশ্লেষণ করে এর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা। কোন পণ্যের বা সেবার বিক্রয় মূল্য কে বলা যাবে না প্রকৃত মূল্য।
 
কারণ বিক্রেতা সব সময় চাইবে তার পণ্যটি বাজার মূল্য থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে, আর ক্রেতা চাইবে বাজার মূল্য থেকে কম দামে ক্রয় করতে। এই অবস্থায় অনেক সময় পণ্যটি বাজার মূল্য থেকে বেশি বা কম দামে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিক্রেতা বা ক্রেতা একটি ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ না করে ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রয় করে থাকেন।
 
অন্যান্য প্রপার্টি ভ্যালুয়েশন থেকে ফ্ল্যাটের ভ্যালুয়েশন বেশ জটিল।কারণ একটি ফ্ল্যাট অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
 
যেমন মনে করুন আপনি পাঁচ বছর পূর্বে একটি পাঁচ কাঠার জমি ক্রয় করেছিলেন বর্তমানে তার মূল্য কত হবে এটা সহজেই হিসাব করা যাবে। আপনার আশেপাশে পাঁচটি জমি কাঠা প্রতি কত টাকা বিক্রি হচ্ছে বা কি রকম দামে ক্রেতা ক্রয়ের জন্য আগ্রহী হচ্ছে এবং আপনার জমির অবস্থান অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা যাবে।
 
কিন্তু একটি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয়ের উপর বিবেচনা করতে হবে। যেমন আপনি যে ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ জমি পাচ্ছেন তার বর্তমান বিক্রয় মূল্য কত ? তারপর ফ্ল্যাটটি কত নম্বর ফ্লোরে কোন পাশে অবস্থিত, ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কারা, তাদের বাজারে সুনাম কেমন, ফ্ল্যাট নির্মাণের বয়স, ফ্ল্যাটের লে আউট প্লেনিং, নির্মাণ শৈলী, সিভি ফিটিং, ফ্ল্যাটে ব্যবহৃত সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং ম্যাটারিয়াল এর কোয়ালিটি, ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও অন্যান্য।
 
তাছাড়া এই এলাকায় আর্থসামাজিক অবকাঠামোগত (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, হাসপাতাল,শপিং মল, বাজার, বিনোদন কেন্দ্র, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য) অবস্থান এবং আগামী বছর গুলোতে রাজউক ও সিটি কর্পোরেশন এই এলাকা উন্নয়নের জন্য কি ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সবগুলো বিষয় বিবেচনা করে একটি ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এই মূল্য নির্ধারণ সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তন হয়। মূল্য নির্ধারণ শুধুমাত্র ক্রয় বিক্রয় মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
 
অনেক সময় সম্পত্তি বন্টননামায় এই মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন যদি একটি ফ্ল্যাট কে দুই ভাইয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হয় সে ক্ষেত্রে একজন ফ্ল্যাটের অর্ধেকটা ক্রয় করতে হবে এবং অপরজন বিক্রয় করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সঠিক মূল্য নির্ধারণ না হলে সমানভাবে সম্পত্তি বন্টন করা সম্ভব হবে না। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে মূল্য নির্ধারণ করা মানে এই নয় কোন পণ্যের বা সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য। কারণ বিক্রয় মূল্য অনেক সময় প্রকৃত মূল্য থেকে কম বেশি হয়ে থাকে। এই জটিল বিষয়টি ভালোভাবে জানতে হলে একজন রিয়েল এস্টেট পরামর্শকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
 
কেননা একজন রিয়েল এস্টেট পরামর্শক উপরোক্ত প্রত্যেকটি বিষয় পরীক্ষণ করে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।তবে অবশ্যই রিয়েল এস্টেট পরামর্শকে ফ্ল্যাটটি ভিজিট করে সবকিছু অবজারভেশন করে নিতে হবে।
 
আমাদের দেশে ব্যাংক সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু ব্যাংক প্রকৃত মূল্য থেকে তারা তুলনামূলক কম দামে নির্ধারণ করে। কারণ ব্যাংক সব সময় তুলনামূলক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে যে কোন প্রকার ব্যবসায়িক লেনদেন করে থাকে ।
 
একজন সচেতন ক্রেতা হিসাবে আপনি যদি ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণ করতে পারলে তবে বুঝতে পারবেন আপনি ফ্ল্যাটটি বেশি দামে ক্রয় করছেন নাকি কম দামে ক্রয় করছেন। আপনার ক্রয় কৃত ফ্ল্যাটটি যদি প্রকৃত মূল্য থেকে 5% বেশি বা কম মূল্যে ক্রয় করে থাকেন তবে সেটাকে ও বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কারণ ফ্ল্যাট ভ্যালুয়েশন বা মূল্য নির্ধারণ প্রায় সঠিক হিসাবে ধরা হয়,কিন্তু একদম সঠিক বলা যাবে না। ফ্ল্যাট ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই আপনার পছন্দের কয়েকটি ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণ করে তুলনামূলক অধিক সুবিধাজনক ফ্ল্যাটটি ক্রয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম।
লেখক : রিয়েল এস্টেট পরামর্শক

Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *