যুগের সঙ্গে মানুষের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন আসছে। সেই চিন্তা থেকেই মানুষের পেশাগত ভাবনার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সময় তরুণ তরুণীয় পছন্দের পেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যম। এখানে খ্যাতি, সুনাম, সুপরিচিতির পাশাপাশি আছে উজ্জ্বল জীবনের হাতছানি। পেশার দৌড়টাও বড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে পত্রিকা, বাড়ছে টিভি এবং রেডিও চ্যানেল। অনলাইন টিভি এবং রেডিও আসছে দাপট দেখাতে। হাতের মোবাইলে এখন সবাই মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত পাচ্ছে খবরা-খবর। শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী রয়েছে এই পেশার বিশাল ক্ষেত্র।

দেশে টেলিভিশনের যাত্রা   

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে সাদা-কালো সম্প্রচার শুরু করে বিটিভি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যাত্রা শুরু হয়। তখন অবশ্য এটি পাকিস্তান টেলিভিশন নামে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম রাখা হয়। ১৯৮০ থেকে এটি রঙিন সম্প্রচার শুরু করে। পরে ১৯৯৭ সালে এটিএন বাংলা সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতায় আরও অনেক দেশি চ্যানেল তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ   

ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বড় ক্ষেত্র হলো টেলিভিশন চ্যানেল। ক্যারিয়ারের বড় ক্ষেত্রও এটি। দেখা ও শোনার কাজটি একই সময়ে ঘটে এখানে। ভিজুয়াল মিডিয়ার দরুন চ্যানেলে কাজ এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বেশ কিছু বিভাগে কাজ করা যায়। যেমন- নিউজ বিভাগ, প্রোগ্রাম বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, এডিটিং বিভাগ, ব্রডকাস্টিং বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, অ্যাডমিন ইত্যাদি। এসব বিভাগে কাজের ক্ষেত্র অনেক। আপনি সংবাদ বিভাগে কাজ করতে চাইলে রিপোর্টার, শিক্ষানবিশ নিউজ রুম এডিটর, সিনিয়র নিউজ রুম এডিটর, সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। অনুষ্ঠান বিভাগে কাজ করতে চাইলে প্রযোজক, সহকারী প্রযোজক, স্ট্ক্রিপ্ট রাইটিং দিয়ে কাজে নামতে পারেন। এ ছাড়া ব্রডকাস্টিংয়ের প্রতি দুর্বলতা থাকলে ভিডিও এডিটর, অডিও ইঞ্জিনিয়ার, ভিডিও ইঞ্জিনিয়ার, ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার, ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি এবং কিছু টেকনিশিয়ান হিসেবেও কাজ শুরু করতে পারেন। এ ছাড়া ফ্যাসিলেটর, কপি রাইটার, ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, গ্রাফিক ডিজাইনার, কোরিওগ্রাফার, মেকআপ আর্টিস্ট এবং এইচআর, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ফাইন্যান্স, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মী হিসেবে আপনিও মিডিয়াতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ

প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রটিও এখন অনেক বড় ও বিস্তৃত। প্রিন্ট মিডিয়ায় পা দিতে গিয়ে অনেকেই রিপোর্টিংয়ের কথা ভাবেন। কিন্তু রিপোর্টার পদ ছাড়াও পত্রিকা, অনলাইন এবং ম্যাগাজিনগুলো বিভিন্ন পদের জন্য লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এখানে আছে সম্পাদকীয় বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, ফিচার বিভাগ, বিতরণ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ। প্রত্যেক বিভাগেই অসংখ্য পোস্ট। এ ছাড়া ফটোসাংবাদিক, আর্টিস্ট, কম্পিউটার এক্সপার্ট, কার্টুনিস্টসহ বিভিন্ন পদে কর্মী প্রয়োজন প্রিন্ট মিডিয়ায়। একজন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে প্রথমে শিক্ষানবিশ ও সহকারী রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। তবে অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে সিনিয়র বা চিফ রিপোর্টার হতে পারেন। পত্রিকাভেদে একজন চিফ রিপোর্টারের বেতন ৩০-৭০ হাজার হয়ে থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এখানে অ্যাকাউন্টিং, ফাইন্যান্স, মানবসম্পদ, মার্কেটিং এবং আইটি বিভাগেও বিভিন্ন নিশ্চিন্তে চাকরি করতে পারেন।

নিজেকে তৈরি   

প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যারিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের স্বপ্নের এই পেশা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুধু উন্নত ক্যারিয়ার, সফলতা আর সামাজিক মর্যাদা অর্জনই কেবল এই পেশার মূল লক্ষ্য নয়; এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে একজন ব্যক্তিকে কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অবশ্যই হতে হবে। উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- সাহস, অন্তর্দৃষ্টি, যোগ্যতা, প্রতিযোগী মনোভাব, ফটোগ্রাফিক দক্ষতা, ভাষার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। শুধু প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়তেই নয়; এই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাকে যে কোনো ক্যারিয়ারে সাফল্যের মুখ দেখাতে বাধ্য। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সাধারণত `গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা` বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য মাধ্যমে পড়াশোনা করা যে কেউ ডিপ্লোমা, যে কোনো কোর্স বা বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে এ পেশায় আসতে পারেন।

যেখানে প্রশিক্ষণ

সাংবাদিকতায় পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসেও পড়া যায়। প্রশিক্ষণ দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো- প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ [পিআইবি], সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং [এমআরটি], বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া [বিজেম], বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বিশ্ব কলাকেন্দ্র, কিংবদন্তি মিডিয়া হাউস, সেন্টার ফর অ্যাডভান্স মিডিয়া [ক্যাম], ঢাকা ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন, চঞ্চল মাহমুদ স্কুল অব ফটোগ্রাফি ইত্যাদি।

এইবার পথে…

দেশে মিডিয়া হাউস দিন দিন বাড়ছে। তাই আগ্রহ, যোগ্যতা আর সৃজনশীলতা থাকলে সহজেই এই বিশাল কর্মক্ষেত্রে স্থান করে নেওয়া সম্ভব। সাংবাদিকতা বা সংশ্নিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা না করেও যে কেউ ভালো প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি তথা ডিজিটালাইজেশনে যত আপডেট থাকা যায়, এখানে সাফল্যের পাল্লা তত ভারী। তাই দেরি না করে আজই নেমে পড়ূন এই উত্তাল পেশায়!

Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *