রোজ সাতসকালে অফিসে যাওয়ার মুডটাই হয়তো নষ্ট হয়ে যায় যাদের বাসা অফিস থেকে দূরে। যাদের ঢাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের জন্য এটি দৈনন্দিনকার বাস্তবতা। আর এই দিনগুলিতে আমাদের সকলেরই চাওয়া, যদি অফিসটা বাসার কাছে হতো! তাই অফিসের কাছে বাসা নেয়া সম্পূর্ণ সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু, এটা কি আসলেই এতটাই ফলপ্রসূ? তাহলে অফিসের কাছে বাসা নেয়ার সুবিধা অসুবিধা গুলো জেনে নেই।
অফিসের কাছে বাসা নেয়া এর সুবিধাসমূহ
হতাশা ও চাপ হ্রাস

অফিসের জন্য রওনা হলে যে সমস্যা গুলো বেশি তাড়া করে তা হল ট্র্যাফিক জ্যাম, মানুষের ভিড়, আবহাওয়ার তাপ এবং সবচেয়ে বেশি দেরী হবার চিন্তা। এই সকল সমস্যা গুলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর চাপ এবং হতাশা সৃষ্টি করে। তাই অফিসের কাছে বাসা নেয়া হলে আপনি এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অফিসে রওনা হওয়ার জন্য আপনাকে আর কয়েক ঘন্টা আগে উঠতে হবে না। আপনি সতেজ, কর্মশক্তিপূর্ণ এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।
অবসর সময়

অফিসে পৌঁছাতে এবং কাজ শেষে বাসায় ফিরতে তখন লাগবে না বেশি সময়। রোজ আপনার সময় অনেকাংশে বেঁচে যাবে যা কিনা আপনি অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। যে কেউ অভিজ্ঞতা করেছেন এই সুবিধাটি তারা যানেন এটি কত বড় সময় সঞ্চয়ী হিসেবে কাজ করছে। আর এই সঞ্চয় করা সময় থেকে আপনি সকালে তৈরি হওয়ার জন্য এবং অফিস শেষে প্রিয়জনদের জন্য পাবেন যথেষ্ট সময়। অফিসের কাছে বাসা নেয়া এর মাধ্যমে বাড়তি সময় পাওয়া এমন একটি স্বপ্ন যা কম বেশি সকলেই বাস্তবের রূপ দিতে চাই।
কর্ম ও জীবনের সামঞ্জস্যতা

অফিসের কাছে বাসা নেয়া হলে আপনার কর্মজীবন এবং ব্যক্তি জীবনের মধ্যেকার সামঞ্জস্যতা সুন্দর ভাবে বজায় থাকবে । অফিসের কাছে বাসা নেয়া হলে অফিস ছুটির সাথে সাথে আপনি অফিস গেটে পৌছাতে পারবেন। সেই সাথে অফিস থেকে বাসায় পৌছাতে কিংবা পরিবারকে সময় দিতে আর সময় নষ্ট করতে হবে না। নিজের প্রয়োজনীয় কাজ গুলোতে ফোকাস করবার জন্য আপনি পাবেন যথেষ্ট সময়। তাছাড়া যেকোন জরুরী অবস্থায় আপনাকে অফিস কামাই দেয়ার প্রয়োজনও পড়বে না, অফিসের কাছে বাসা নেয়া হলে খুব কম সময়েই আপনি বাসায় পৌঁছাতে পারবেন।
অফিসের কাছে বাসা নেয়া এর অসুবিধাসমূহ
গোছানো জীবনে বিঘ্ন ঘটা

অফিসের কাছে বাসা নেয়া সবসময় সুখকর নাও হতে পারে। অফিস যাতায়াতে সুবিধা ঘটাতে পারে স্থায়ী ব্যক্তি জীবনে ব্যাঘাত। যখন আপনি কোন জায়গায় কিছ সময় ধরে থাকতে শুরু করেন, আপনি সেই জায়গায় অভস্থ্য হতে থাকেন। জীবন অনেকটা সাজানো গোছানো হয়ে থাকে এই ধরুন আশেপাশে চলাফেরা, প্রতিবেশীদের সাথে সু-সম্পর্ক সবকিছু মিলিয়ে জীবন এক গতিতে চলতে থাকে। তাই এই কমফোর্ট জোন থেকে নিজেকে বেড় করে নিয়ে আসা। নতুন করে সবকিছু সেই শূন্য থেকে শুরু করা। সাজানো জীবনে সত্যিই ব্যাঘাত ঘটে। তাই অফিসের কাছে বাসা নেয়া আপনার সাজানো জীবনের জন্য হতে পারে কিছুটা অসুবিধাজনক।
ঘনঘন পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়

জীবনে আমরা খুব কম সংখ্যক বারই নিজেদের বাসা পাল্টিয়ে থাকি। নিজেদের কোমফর্ট জোন থেকে বেড়িয়ে এসে আমরা বেঁছে নেই আমাদের একটি ঠিকানা। নিজেদের জানা শোনা জায়গা থেকে বেড়িয়ে নতুন জায়গায় নতুন করে সবকিছু শুরু করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তাই বাসা পাল্টানোর মত বড় কাজ আপনি বার বার করতে পারেন না। বিশেষ করে যদি আপনার পরিবার থেকে থাকে। যখনই আপনি বাসা বদলানোর কথা ভাববেন স্থায়ী জীবনে ব্যাঘাত ঘটবে।
জীবিকা ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে পারে

নিঃসন্দেহে বলা যায় এই শহরে জীবিকার খরচ খুব দ্রুত বেড়ে চলছে। খরচ বৃদ্ধির উপাদানের মধ্যে বাসা সম্পর্কিত খরচ এবং বাসা ভাড়ার খরচ দুটি প্রধান ভূমিকা রাখে। বাসা ভাড়ার বিষয়টি এলাকা থেকে এলাকা এবং বিল্ডিং থেকে বিল্ডিং পরিবর্তিত হয়। বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকা গুলোতে বাসার ভাড়া অন্যান্য এলাকার ভাড়ার থেকে তুলনামূলক বেশি হয়। যেমন, বনানীতে ফ্ল্যাট ভাড়া অনেকটাই উচ্চতর হয়ে থাকে খিলগাঁও এলাকা থেকে। তাই যদি অফিসের কাছে বাসা নেয়া হলে নিঃসন্দেহে মনস্থির করে নেয়া ভালো যে জীবিকা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।
বাসা পাল্টানো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং এটি হালকাভাবে গ্রহণ করা উচিৎ হবে না। শীতল মস্তিষ্কে অফিসের কাছে বাসা নেয়ার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবতে হবে। তাই যখনই অফিসের কাছে বাসা নেয়ার কথা ভাবছেন এই বিষয় গুলোতে আলোকপাত করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।